কম্পিউটার সিস্টেম পরস্পর সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের উপাদান নিয়ে গঠিত, যা ব্যবহারকারী প্রদত্ত কোনো প্রোগ্রামের নির্দেশাবলি পালন করে এবং ফলাফল প্রদান করে।
কম্পিউটার সংগঠন বলতে কেবল হার্ডওয়্যারের সংগঠনকে বোঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ কম্পিউটার সংগঠন হচ্ছে কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের বিন্যাস বা গঠন। কম্পিউটারের কোনো যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ বিচ্ছিন্নভাবে সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে পারে না। কম্পিউটারের সাহায্যে কাজ করার জন্য তাই প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের মধ্যে নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী সংযোগ স্থাপনের প্রয়োজন হয়। নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের প্রক্রিয়াকে কম্পিউটার সংগঠন বলে।
আধুনিক কম্পিউটারের প্রধান সাংগঠনিক অংশগুলো হলো:
১. ইনপুট ইউনিট।
২. অ্যারিথমেটিক লজিক ইউনিট বা গাণিতিক যুক্তি অংশ (ALU)।
৩. কন্ট্রোল ইউনিট বা নিয়ন্ত্রণ অংশ।
৪. মেমোরি।
৫. আউটপুট ইউনিট।
১. ইনপুট ইউনিট : ইনপুট দিয়ে কম্পিউটারকে সমস্যা সমাধানের জন্য কাজের নির্দিষ্ট নির্দেশ পালনের উপযোগী প্রয়োজনীয় ডাটা দেয়া হয়। এ ইউনিট বিশেষ মাধ্যম থেকে ডাটা ও প্রোগ্রাম গ্রহণ করে বৈদ্যুতিক তরঙ্গে রূপান্তর করে কম্পিউটারের মেমোরিতে পাঠায়। কিছু ইনপুট যন্ত্র হলো:
ক. কীবোর্ড;
খ. মাউস;
গ. জয়স্টিক;
ঘ. স্ক্যানার;
ঙ. ডিস্ক;
চ. ডিজিটাল ক্যামেরা ইত্যাদি।
২. সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (CPU) : কম্পিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট হচ্ছে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ যা কম্পিউটারের মস্তিষ্কস্বরূপ। সিপিইউ যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ, হিসাব নিকাশ ও নিয়ন্ত্রণের কাজ করে। সিপিইউ এর মধ্যে তিনটি প্রধান ইউনিট থাকে। যেমন:
ক. অ্যারিথমেটিক Logic/লজিক ইউনিট বা গাণিতিক যুক্তি অংশ;
খ. কন্ট্রোল ইউনিট বা নিয়ন্ত্রণ অংশ; ও
গ. মেমোরি বা স্মৃতি ভান্ডার।
৩. আউটপুট ইউনিট : আউটপুট ইউনিট প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পাওয়া ফলাফল মানুষের অনুধাবনযোগ্যরূপে তুলে ধরে। কিছু আউটপুট যন্ত্রপাতি হলো:
ক. মনিটর;
খ. স্পিকার;
গ. প্রিন্টার;
ঘ. প্লটার ইত্যাদি।
ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করে ফলাফল হিসেবে তথ্য পাওয়া যায়। এই প্রাপ্ত ডেটাকে প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ, বিন্যাস প্রভৃতির মাধ্যমে অর্থপূর্ণ তথ্য বা ইনফরমেশনে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ বা ডেটা প্রসেসিং (Data processing)। যেমন পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতে ছাত্রদের মেধাক্রম নির্ণয়, বাৎসরিক কেনাবেচার সাপেক্ষে কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লাভ, লােকসানের হিসাব নির্ণয় ইত্যাদি। বাহ্যিকভাবে ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করার দুটো পদ্ধতি আছে। যথা হাতে-কলমে ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সহায়তা নিয়ে। তাই ডেটা প্রসেসিং দুই প্রকার, যথা-
১. MDP (ম্যানুয়াল ডেটা প্রসেসিং)
২. EDP (ইলেক্ট্রনিক ডেটা প্রলােসং)
ম্যানুয়াল ডেটা প্রসেসিং (MDP)
কম্পিউটার বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া হাতে কলমে ডেটা প্রসেসিং করাকে MDP (Manual Data Processing) বলে। যেমন: ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন রিপাের্ট বা পে-রােল তৈরি করতে হলে প্রত্যেক কর্মী মােট কত ঘণ্টা কাজ করেছে তার ভিত্তিতে ক্যালকুলেটর চেপে কাগজ-কলমে লিখে যােগ, বিয়ােগ, গুণ ও ভাগ করে চূড়ান্ত রিপাের্ট তৈরি করা। এতে অনেক সময় লাগে এবং ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও প্রচুর।
ইলেক্ট্রনিক ডেটা প্রসেসিং (EDP)
ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে কম্পিউটার বা অন্য কোন যন্ত্রপাতির সাহায্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যে প্রসেসিং করা হয় তাকে ইলেক্ট্রনিক ডেটা প্রসেসিং বা EDP (Electronic Data Processing) বলা হয়। এতে সময় অনেক কম লাগে এবং একই কাজ বার বার করতে হয় এমন কাজ দ্রুত ও সহজে করা যায়। কম্পিউটার দিয়ে অতি দ্রত নির্ভুলভাবে ডেটা প্রসেসিং করা যায়। এক্ষেত্রে ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে ডেটা কম্পিউটারে ঢুকানাে হয়। কম্পিউটার তার অস্থায়ী মেমােরিতে ডেটা রেখে প্রোগ্রামের নির্দেশ অনুযায়ী প্রসেসিং করে। কম্পিউটার প্রদত্ত নির্দেশ অনুযায়ী ডেটাকে বিভিন্নভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে এবং প্রয়ােজনীয় গাণিতিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বা যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং সবশেষে কাঙ্ক্ষিত তথ্য আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে প্রদর্শন করে।
IOPS (Input/Output Operations Per Second) Cycle হল ডিস্ক ড্রাইভের কাজ করার প্রক্রিয়া যা প্রতিটি I/O অপারেশনের মাধ্যমে ঘটে।
সিস্টেমের ডিস্ক ড্রাইভ থেকে ডেটা পড়া এবং ডাটা লেখার কাজে I/O অপারেশন ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি I/O অপারেশনের মধ্যে সিস্টেম ডিস্ক ড্রাইভের মাধ্যমে ডেটা বা ফাইল থেকে পড়া হয় বা ডাটা লেখার জন্য ডিস্ক ড্রাইভে ডেটা লেখা হয়। এই প্রক্রিয়াকে IOPS Cycle বলা হয়।
একটি IOPS Cycle দুটি অংশে বিভক্ত হয়: প্রথমে সিস্টেম ডিস্ক ড্রাইভ থেকে ডেটা পড়া বা লেখার জন্য ডিস্ক ড্রাইভের স্পিন্ডল মটর এবং রেডিং/রাইটিং হেড ঘুরে যায়। এরপর ডেটা মেমরি বা ক্যাশে লোড করা হয়। এই দুইটি অংশ একসাথে IOPS Cycle হিসাবে কাজ করে এবং একাধিক IOPS সম্পন্ন হলে সিস্টেম ডিস্ক ড্রাইভের কাজ পরিস্কার হয়।
হার্ডওয়্যার (Hardware): কম্পিউটারের বাহ্যিক আকৃতি সম্পন্ন সকল যন্ত্র, যন্ত্রাংশ ও ডিভাইসসমূহকে হার্ডওয়্যার বলে। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারকে প্রাথমিকভাবে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
ক. ইনপুট যন্ত্রপাতি: কী-বাের্ড, মাউস, জয়স্টিক, ডিস্ক, স্ক্যানার, কার্ড রিডার, ডিজিটাল ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, অপটিক্যাল বা আলােকীয় বর্ণ রিডার, ভিজুয়াল ডিসপ্লে ইউনিট ইত্যাদি।
খ. সিস্টেম ইউনিট (System Unit): সিপিইউ বা মাইক্রোপ্রসেসর, র্যাম, হার্ডডিস্ক, ফ্লোপি ডিস্ক, মাদারবাের্ড, পাওয়ার সাপ্লাই, ভিজিএ/এজিপি কার্ড, নেটওয়ার্ক কার্ড, সাউন্ড কার্ড, সিডিরম ড্রাইভ, কনসােল ইত্যাদি।
গ. আউটপুট যন্ত্রপাতি: মনিটর, প্রিন্টার, প্লেটার, মাইক্রোফিল্ম , ডিস্ক, স্পিকার ইত্যাদি।
Read more